কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভানী খাল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরি করা হচ্ছে। আর এতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছে উপজেলার শতাধিক কৃষক পরিবার।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর মাধ্যমে সারা দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর ও জায়গা দেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দেবিদ্বার উপজেলার ১২ নং ভানী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড ভানী গ্রামে ৪০ জন ভূমিহীনের জন্য ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, ভানী ইউপির চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়ার উদ্যোগে ভানী খালটি ভরাট করা হচ্ছে, যাতে কিনা তাদের জমির সেচের পানি নিষ্কাশিত হয় ।
কৃষকরা জানান, ভানী খাল ভরাট করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ঘর। খালটি ভরাট করা হলে দেবিদ্বার উপজেলার ভানী, আছাদনগর, খিরাইকান্দি, বখরিকান্দি, আন্দিরপাড়, মধ্যনগর, টেবারিয়াসহ প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কয়েক শ কৃষক পরিবার দুর্ভোগে পড়বে।
তাদের অভিযোগ, দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের আরও একাধিক স্থানে সরকারের খাসজমি থাকলেও ভানী ইউপির চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া ও কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল গোমতী নদীর শাখা ভানী খাল ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কৃষিজমিতে সেচের পানি ও বর্ষার পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা ও বন্যার সৃষ্টি হবে। ফলে নষ্ট হবে জমির ফসল।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবহমান ভানী খালটি ভরাট করা হচ্ছে। এই খালটি দিয়ে শতাধিক কৃষকের জমির পানি সরে যায়।
খাল ভরাট নিয়ে দুঃখ করে কৃষক আবদুল আওয়াল বলেন, ‘বাজান আমডা গরিব মানুষ। মাইনসের জমি চাষবাস কইরা খাই। খালডা যদি পুরাইয়ালায় জমিনডাত আর কোনো ফসল করতাম পারতাম নারে। সরকার কেমনে আমডারে মাইরা আরেক তারারে ঘর বানাইয়া দেয় বুঝে আইয়ে না। আমডা কি এই দেশের মানুষ না?’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, খালের ভরাটকৃত অংশ সরকারি খাসজমি। খালটি আগেই দখল হয়েছে। এ নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে কোনো সাধারণ মানুষ ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেদিকে আমরা সব সময় খেয়াল রাখছি। ভানী খাল ভরাটের অভিযোগ সত্য নয়। অভিযোগ পেয়ে দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। যতটুকু জানতে পেরেছি, ভানী গ্রামে গৃহহীনদের জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির পুরোনো দ্বন্দ্ব কাজ করছে। খাল ভরাটে কৃষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি।’